অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেনর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার বাহিনী পূর্বে বাখমুত এবং সোলেদারকে রক্ষা করে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ান সৈন্যদের উপসাগরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেবে। কিয়েভ বলেছে, এর আগে তাদের সৈন্যরা দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিধ্বস্ত শিল্প শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য লড়াই করছিল, যা রাশিয়ান ভাড়াটেরা এই সপ্তাহের শুরুর দিকে দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।
ক্রেমলিন প্রায় এক বছরের লড়াইয়ের পর বাখমুত এবং এর সাথে সোলেদার দখল করাকে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছে। রাজধানী কিয়েভ দখলের মতো আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
‘আমি জোর দিতে বলতে চাই যে, এই শহরগুলো রক্ষাকারী ইউনিটগুলোকে গোলাবারুদ এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু সময় মতো এবং বাধা ছাড়াই সরবরাহ করা হবে’ জেলেনস্কি সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গান্না মালিয়ার এর আগে বলেছিলেন, সোলেদারের জন্য লড়াইটি ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ’ ছিল।
তিনি বলেন, ‘কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইউক্রেনীয় সৈন্যরা একগুঁয়ে লড়াই করছে।’
যদিও রাশিয়ান ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনার বুধবার দাবি করেছে যে, তাদের বাহিনী সোলেদারকে দখল করেছে। মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, লড়াই চলছে এবং ইউক্রেন সোলেদার সম্পূর্ণ দখলের দাবী অস্বীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সামরিক মানচিত্রে সোলেদারকে মস্কোর নিয়মিত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে দেখা যায়নি। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী পূর্বে বাখমুত এবং সোলেদারকে রক্ষা করে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রাশিয়ান সৈন্যদের উপসাগরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দিয়ে সজ্জিত করবে।
ডোনেটস্কে একজন রাশিয়া-প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তা আন্দ্রে বেয়ভস্কি বলেছেন, শহরের অভ্যন্তরে ইউক্রেন থেকে এখনও ‘ছোট প্রতিরোধের পকেট’ রয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, রাশিয়ান-সমর্থিত সেনাদের প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
সোলেদার এবং নিকটবর্তী বৃহত্তর শহর বাখমুতের জন্য লড়াইয়ে উভয় পক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেছে, যা ইউক্রেন থেকে ডোনেটস্ককে বিচ্ছিন্ন করে নেয়া জন্য রাশিয়ার লক্ষ্যের মূল চাবিকাঠি।
ক্রেমলিন বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পূর্ব ডোনেটস্ক অঞ্চল দখল এবং অন্যান্য ফ্রন্টে কাজ করা রাশিয়ান বাহিনীর ‘বীরত্বপূর্ণ’ কাজের প্রশংসা করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘সোলেদারে বিশাল কাজ করা হয়েছে, একেবারে নিঃস্বার্থ বীরত্বপূর্ণ কাজ, শুধু সোলেদারেই নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখনও অনেক কাজ বাকি। মূল কাজ এখনো বাকি আছে।’
সোলেদারের জন্য যুদ্ধটি এসেছে যখন মস্কো বুধবার একটি বড় সামরিক রদবদল ঘোষণা করেছে। ইউক্রেনে তাদের অপারেশনের দায়িত্বে জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে নিযুক্ত করেছে।
মস্কো-ভিত্তিক এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এএফপি’কে এই পদক্ষেপকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে বর্ণনা করে বলেছেন, এটি যুদ্ধক্ষেত্রে ‘খুব গুরুতর সমস্যা’ নির্দেশ করে।
‘১৯৪১ সালের পর থেকে এমনটি আর ঘটেনি, যখন মার্শাল জর্জি ঝুকভকে কমান্ডের জন্য ফ্রন্টে পাঠানো হয়েছিল।’
বুধবারের নিয়োগের অংশ হিসেবে রাশিয়ার স্থল বাহিনীর প্রধান ওলেগ স্যালিউকভকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ডেপুটি কমান্ডার মনোনীত করা হয়েছিল।
মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তিনি সেখানে অবস্থানরত একটি যৌথ আঞ্চলিক বাহিনী পরিদর্শন করতে মস্কোর মিত্র বেলারুশ সফর করেন।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া আক্রমণ শুরু করলে বেলারুশ সেখানে অবস্থানরত মস্কোর সৈন্যদের তার ভূখন্ড দিয়ে ইউক্রেন সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি দেয়।
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সোলেদার একটি লবণ খনির শহর যেখানে যুদ্ধ শুরুর আগে জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ১০ হাজার এর ও বেশি। শহরটির কৌশলগত গুরুত্ব খুব কম।
রাশিয়ার সামরিক বিশ্লেষক আনাতোলি খ্রামচিখিন এএফপি’কে বলেছেন, ‘যে কোনো জয়ই গুরুত্বপূর্ণ।’
Leave a Reply